শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের পূর্ব-দক্ষিণের গ্রাম পিঠাপশী। সময়ের পরিক্রমায় গ্রামটিতে বেড়েছে জনসংখ্যা, প্রয়োজনের তাগিদে বড় হয়েছে গ্রাম। উত্তর আর দক্ষিণে ভাগ হয়ে বিশাল গ্রামটি এখন দ্বিখণ্ডিত। ঘোড়াডুম্বুর, জাইল্লা, নাজিমপুরসহ সর্বমোট ৯টি গ্রাম এই অঞ্চলে। গ্রামগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস।
তাদের যোগাযোগের প্রধানতম সড়কপথ হচ্ছে পিঠাপশী-ঘোড়াডুম্বুর সড়ক। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের খারাইয়ের যাত্রীছাউনি পয়েন্ট থেকে নয়াগাঁও পয়েন্ট পর্যন্ত এ সড়কের বেহাল অবস্থা! এমন সুন্দর সড়ক দেখলে আনন্দে যে কারো মন পুলকিত হওয়ার কথা। কিন্তু চলন্ত অবস্থায় দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই সেই আনন্দ মলিন হয়ে যায়। কারণ নয়াবাজার পয়েন্ট পার হয়ে যে সেতু পাওয়া যায় তার দুই প্রান্তের রাস্তা পুরোটাই ভাঙা।
এর পর ঘোড়াডুম্বুর গ্রাম পর্যন্ত এ সড়কের অগণিত স্থানে বড় বড় গর্তসহ রাস্তার ভাঙা দৃশ্য বর্তমান। গত শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পিঠাপশী-ঘোড়াডুম্বুর সড়কের বেহাল দশা। নয়াবাজার সংলগ্ন সেতুর উভয়প্রান্তের রাস্তার গালার আস্তরণ উঠে গেছে। একটু এগিয়ে গেলে পঞ্চাশোর্ধ মোত্তাকিন মিয়ার বাড়ি। এখানকার রাস্তার অবস্থা একেবারে নাজুক।
কমপক্ষে পঞ্চাশ ফুট রাস্তার মূল আস্তরণ উঠে মাটি দেখা যাচ্ছে। রাস্তার ভাঙন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, দুই প্রান্তের দুটি সিএনজি চালিত ফোরস্ট্রোক পারাপার হতে গেলেও একটা থামতে হয় তারপর অপরটা পার হয়ে যায়। এর চেয়ে আরও বাজে অবস্থা উত্তর পিঠাপশী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উভয়পাশের প্রায় ২০০ মিটার জায়গার। দুদিক থেকেই রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় ভাঙা। মাটি সরতে সরতে মূল রাস্তা থেকে অন্তত দুই ফুট নিচে ধেবে গেছে।
রাস্তাটির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হচ্ছে বড় ভাঙা নামক স্থান। এই জায়গাটি এত বাজেভাবে ভেঙেছে এবং এত বেশি ভেঙেছে, স্থানীয়রা এ স্থানেরই নামকরণ করেছেন বড় ভাঙা। এখানে এসে লেগুনা, সিএনজি, টমটমের যাত্রীরা নেমে পার হতে দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে বড় ভাঙায় যাত্রী বহন করার বাহনকেও ঠেলে পার করতে হয়। এসব বড় বড় ভাঙা ছাড়াও আরও অনেক ছোটবড় গর্ত রয়েছে এ রাস্তায়।
এ রাস্তায় সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত। শিক্ষার্থী, রোগী, গর্ভবতী মহিলাসহ বৃদ্ধা-বৃদ্ধা ও শিশুদের জন্য রাস্তাটি যেন একটি মরণফাঁদ। এসব খানাখন্দের গর্তে পরে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো ঘটনা। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও তারা বলছেন, তাদের দাবির বিষয়ে কেউই কর্ণপাত করছেন না। এমন দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে চলতে চলতে তারা এখন অতিষ্ঠ। রাস্তার দুর্ভোগ থেকে দ্রুত স্থায়ী সমাধান চান উপজেলার পূর্বাঞ্চলের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
আবদুস সত্তার কবির মিয়া, শোভা মিয়া, আবদুল তাহিদ ও তেরা মিয়াসহ বেশ কয়েকজন পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. মাসুক মিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা জানান, তাকে আমরা ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছি আমাদের দুঃখ দুর্দশা দেখার জন্য। নির্বাচনের আগে কয়েকবার পিঠাপশী ঘোড়াডুম্বুর এলেও নির্বাচনে বিজয় লাভের পর একদিনও আসেননি।
তাকে রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছি। আমাদের কথায় তিনি কর্ণপাতই করেন না। মকবুল হোসেন নামের অপর একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় করে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিবরণ দেয়ার দরকার নেই, এককথায় পিঠাপশী-ঘোড়াডুম্বুরের রাস্তা মানুষের জন্য মরণ ফাঁদ।
তার উপর আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া বলেন, আমি এই গ্রামগুলোতে যথেষ্ট বরাদ্দ দেই। যা পাই তার বেশির ভাই সেদিকেই বরাদ্দ দেই। কিন্তু আমি বলি একদিকে, সেখানকার মানুষ কাজ করায় অন্যদিকে। তাদের বলেছি, আগে রাস্তার কাজটা করি। তাদের সাথে একটা ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আল নূর তারেক বলেন, এ রাস্তাটির ব্যাপারে আমরা জ্ঞাত আছি। এর আগে একবার এ রাস্তার জন্য ডিআরআরপি পাঠিয়েছিলাম। রেট চেঞ্জ হওয়ায় সেটা আবার পাঠাতে হবে। এই মাসের শেষের দিকে আবার পাঠাব। আশা করছি কাজটি দ্রুতই আমরা পেয়ে যাবো। এ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
টিএইচ